কেন গোপনীয়তা প্রয়োজনীয়
গোপনীয়তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অধিকাংশ মানুষের মাঝেই অবহেলা রয়েছে। অধিকাংশ লোক এই বিষয়টায় কোনো গুরুত্বই দেয় না। তারা মনে করে তারা কোনো খারাপ কাজ করে না, তাই তাদের কিছু লুকানোর নেই। কিন্তু এই বিষয়টি মোটেও এত সহজ নয়। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা আমাদের উপরে নজরদারি করছে। তারা অপরাধ দমনের জন্য হয়তো আমাদের উপরে নজরদারি করছে। আপনি হয়তো অপরাধী নন তাই সরকারের কাছে থেকে নিজেকে লুকাতে চাইবেন না। কিন্তু আরও অনেক সংস্থা/ব্যক্তি রয়েছে যারা আপনার উপরে নজরদারি করতে পারে এবং তারা আপনার ক্ষতি করতে পারে। কীভাবে?
অপরাধীরা আপনার তথ্য ব্যবহার করে অপরাধ করতে পারে
অপরাধীরা আপনার তথ্য তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। তারা আপনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে আপনার উপরে আক্রমণ করতে পারে। আপনার ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহার করে আপনাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হতে পারে। কিংবা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করতে ব্যবহার করা হতে পারে। অথবা তারা আপনার পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ করতে পারে। তখন কিন্তু অপরাধের দোষারোপ আপনার উপরেই পরবে। স্থানীয় অপরাধীরা আপনার তথ্য সংগ্রহ করে আপনি কখন বাড়িতে অনুপস্থিত থাকেন তার ভিত্তিতে আপনার বাড়িতে চুরি বা ডাকাতির পরিকল্পনাও করতে পারে।
আপনাকে পণ্য কিনতে বাধ্য করা হতে পারে
আপনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞাপনদাতারা আপনাকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। তারা আপনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে এবং সেই অনুযায়ী তারা আপনাকে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে। আপনার হয়তো মনে হচ্ছে এতে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু তা ঠিক না। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে আপনাকে এমনভাবে ম্যানিপুলেট করা হতে পারে, যে আপনি কোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস অযথা টাকা খরচ করে কিনবেন। কিংবা হয়তো আপনাকে ভালো মানের পণ্য রেখে কোনো কম মানের পণ্য কিনতে বাধ্য করা হতে পারে।
আপনার সম্মান নষ্ট করা হতে পারে
আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে সমাজে আপনার সন্মান নষ্ট করা হতে পারে। আপনার অতীতের কোনো কাজের ভিত্তিতে আপনাকে অন্যদের চোখে নিচু কপ্রা হতে পারে। আপনার কোনো ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অন্যদের নিকটে আপনি অপরাধী বা অসম্মানীয় হয়ে যেতে পারে। সবচেয়ে বড় সমস্যা এখানে আপনাকে দ্বিতীয় কোনো সুযোগ পাবেন না। গোপনীয়তা থাকলে আপনার ভুল হয়তো গোপনই থাকতো এবং আপনি নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পেতেন, কিন্তু গোপনীয়তা না থাকলে তা সম্ভব নয়।
চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা
আপনার ব্যক্তিগত তথ্য আপনার চিন্তার স্বাধীনতা হরণে ব্যবহার করা হতে পারে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তিবর্গ আপনার তথ্য ব্যবহার করে নির্বাচনে ভোট নিতে পারে। অন্যরা কী ভাববে এটা মনে করে আপনি ভয়ে থাকতে পারেন এবং আপনার কোনো ভালো কাজও বন্ধ করে দিতে পারেন।
আপনাকে অন্যের ক্ষতি করতে ব্যবহার করা হতে পারে
আপনার গোপনীয়তা শুধু আপনার সুরক্ষার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, অন্যদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আপনার তথ্য ব্যবহার করে অন্যদেরও ক্ষতি করা হতে পারে। আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের কোনো গোপন বিষয় আপনার কাছে থেকে জেনে তাদের ক্ষতি করা হতে পারে। অর্থাৎ আপনি তাদের বিশ্বাস ভাঙছেন এবং তাদের ক্ষতি করছেন। তাই অন্যদের স্বার্থেও আপনাকে গোপনীয়তা চর্চা করা উচিত।
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরও অনেক কারণ রয়েছে যার জন্য আপনার গোপনীয়তা চর্চা করা উচিত। আর গোপনীয়তা চর্চার মাধ্যমে আপনি নিজেকে নিরাপদ করার সাথে সাথে অন্যদেরও নিরাপদে রাখছেন। সাংবাদিক বা আন্দোলনকর্মীদের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে গোপনীয়তা চর্চা করতে হয়। যখন আপনি গোপনীয়তা চর্চা করবেন, তখন তারাও কোনো ঝামেলা ছাড়াই নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারবে। তাই গোপনীয়তাকে গুরুত্ব দিন।